প্রায় ৪০ লাখ মানুষের জরুরি সেবার জন্য নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে স্থাপন করা হয় ৩০ শয্যার নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) ইউনিট। কিন্তু চালুর পর থেকে জনবলসংকট, কেন্দ্রীয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (সেন্ট্রাল এসি) ও জেনারেটর বিকলসহ নানা সমস্যায় ভুগছে এই ইউনিট। এতে রোগীদের জরুরি সেবা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, জনবলসংকটের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও এসি-জেনারেটরের বিষয়ে গণপূর্তকে জানানো হয়েছে। তাঁরা এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবেন। জানা গেছে, জেলা প্রতিষ্ঠার পর থেকে বৃহত্তর নোয়াখালী (নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষ্মীপুর) অঞ্চলে আইসিইউ সেবা চালু না থাকায় জরুরি সেবা থেকে বঞ্চিত ছিলেন এই অঞ্চলের মানুষ। এই অঞ্চলের রোগীদের আইসিইউ সেবার জন্য যেতে হতো ঢাকা, কুমিল্লা ও চট্টগ্রামে। অনেক সময় দূরের পথ পাড়ি দিতে পথিমধ্যেই অনেক রোগী মারা যেতেন।
এ সংকট নিরসনে ২০২২ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ৩০ শয্যার আইসিইউ স্থাপনের জন্য কর্মপরিকল্পনা হস্তান্তর করে স্বাস্থ্য বিভাগ। ৩০ শয্যার এই ইউনিট পুরো ব্যবহার উপযোগী হলেও এখনো সেখানে নেই প্রয়োজনীয় দক্ষ জনবল। পাশাপাশি হাসপাতালের চতুর্থ তলায় এই ইউনিট হলেও নেই কোনো লিফট ব্যবস্থা। জনবলসংকটের মধ্যেই ২০২৩ সালের ১৪ নভেম্বর ৩০ শয্যার এই আইসিইউ ইউনিটের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের ৩ মাস পরই (চলতি বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি) থেকে ৫ শয্যায় রোগী ভর্তির কার্যক্রম শুরু করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে এখনো চালু হয়নি এইচডিইউসহ বাকি ২৫ শয্যার কার্যক্রম। চালু হওয়া ৫ শয্যার বিপরীতেও নেই দক্ষ জনবল। কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে স্থাপিত আইসিইউ ইউনিটটি চালু হওয়ার কয়েক দিনের মাথায় সেন্ট্রাল এসিতে সমস্যা দেখা দেয়। বিভিন্ন যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে প্রয়োজন মতো ব্যবহার করা যায়নি জেনারেটর।
ফলে আইসিইউতে ভর্তি রোগী, চিকিৎসক ও নার্স সবাইকেই ভোগান্তির মুখে পড়তে হয়। এসি ও জেনারেটর কাজ না করায় সবশেষ গত ১০ মে থেকে ১৪ মে পর্যন্ত বন্ধ থাকে আইসিইউটি। ফলে রোগী ভর্তির কার্যক্রমও বন্ধ থাকে। তবে কর্তৃপক্ষ বলছে জীবাণুমুক্ত করণ কার্যক্রমের কারণে সাময়িক বন্ধ রাখা হয়েছে, তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে পুনরায় চালু করা হবে ইউনিটটি। এরই মধ্যে গত ১১ মে ভোরে হাসপাতালটির কিডনি ডায়ালাইসিস ইউনিট থেকে একজন রোগীকে আইসিইউতে পাঠানোর পর সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। পরে রোগীর স্বজনেরা তাড়াহুড়ো করে তাঁকে কুমিল্লা নেওয়ার চেষ্টা করলে বেগমগঞ্জ উপজেলার গাবুয়া বাজারে মারা যান ওই রোগী।
মৃত রোগীর মেয়ে আঁখি বলেন, ‘আমার মা আইসিইউর চিকিৎসা না পেয়ে মারা গেল। তাহলে কেন সরকার এত কোটি কোটি টাকা খরচ করে আইসিইউ চালু করল আবার সেটা বন্ধ কেন হলো।’ ইউনিটের নার্সিং ইনচার্জ নূর নাহার খুশবু বলেন, ‘আইসিইউ ইউনিটটির নিরাপত্তায় কোনো জনবল নেই। পর্যাপ্ত জনবল না থাকায় আমাদের নির্ধারিত সময়ের অতিরিক্ত কাজ করতে হয়।’ হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘নষ্ট হওয়া এসির বিষয়ে গণপূর্ত বিভাগকে একাধিকবার চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে এবং জনবল সংকট নিরসনে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তাঁরাই জনবল সংকটের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবে।’