নোয়াখালীর উপকূলীয় সুবর্ণচর উপজেলার কাটাবুনিয়া গ্রামের আকলিমা বেগম ২০১৭ সাল থেকে কিডনি রোগে আক্রান্ত। রোগ শনাক্ত হওয়ার পর ২০২২ সাল থেকে তাঁর ডায়ালাইসিস (কৃত্রিম উপায়ে রক্ত পরিশোধন) শুরু হয়। এতদিন চিকিৎসা নিয়েছেন ঢাকায়। সপ্তাহে ডায়ালাইসিসে লাগত ৫ হাজার ১০০ টাকা। আসা-যাওয়া এবং ওষুধের জন্য আরও প্রায় ৪ হাজার টাকা ব্যয় হতো। প্রতি সপ্তাহে এত টাকা খরচ করে প্রায় নিঃস্ব হয়ে যাওয়া আকলিমা ছয় মাস আগে জানতে পারেন, নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে মাত্র ৪০০ টাকা কিংবা বিনামূল্যে ডায়ালাইসিস করানো যায়। তার পর সেই হাসপাতালে নিবন্ধন করে ডায়ালাইসিস শুরু করেন তিনি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আকলিমার পরিবারের নিঃস্ব অবস্থা জানার পর ডায়ালাইসিসসহ সব চিকিৎসা দিচ্ছে বিনামূল্যে। আকলিমা জানান, তিনি শুধু বিনামূল্যে ডায়ালাইসিস করাতেই পারছেন না; অন্যান্য পরীক্ষা ও ওষুধও বিনামূল্যে পাচ্ছেন। এভাবেই নোয়াখালীর উপকূলীয় অঞ্চলের বহু কিডনি রোগীর জন্য আশার আলো জ্বালিয়েছেন চিকিৎসক ফজলে এলাহী খান। ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের নেফ্রোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তিনি। পাশাপাশি নিজের জন্মভূমি নোয়াখালীর বিভিন্ন এলাকায় রেখে চলেছেন মানবিকতার স্বাক্ষর। তাঁর হাত ধরে বদলে গেছে নোয়াখালীর কিডনি চিকিৎসা। নোয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সহকারী অধ্যাপক থাকা অবস্থায় ২০১৮ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর জেনারেল হাসপাতালে ডায়ালাইসিস কেন্দ্র চালু করেন তিনি। গরিব-অসহায় রোগীদের প্রতি দায়িত্ববোধ থেকেই স্থাপন করেছেন ২০ শয্যার একটি কিডনি ডায়ালাইসিস ইউনিট ও ১৬ শয্যাবিশিষ্ট কিডনি ওয়ার্ড, অত্যাধুনিক ডায়াগনস্টিক রেনাল ল্যাব ও মলিকুলার ল্যাব। জানা গেছে, শুরুতে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ১০টি হেমোডায়ালাইসিস মেশিন নিয়ে ১০ বেডবিশিষ্ট ডায়ালাইসিস ইউনিট শুরু হয়। ২০২০ সালে আরও ১০টি এবং ২০২২ সালে যুক্ত করা হয় আরও পাঁচটি মেশিন। এখন ২৫টি মেশিনের মধ্যে ২০টি দিয়ে নিয়মিত রোগীদের ডায়ালাইসিস চলছে। পূর্ণাঙ্গ ল্যাবরেটরি সেবা চালু থাকায় বর্তমানে কিডনি রোগীদের সব রকম পরীক্ষার ব্যবস্থা আছে। হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার সৈয়দ মহিউদ্দিন আব্দুল আজীম বলেন, এখানে ৪০০ টাকায় ডায়ালাইসিস করা যায়। আবার গরিব রোগীদের বিনামূল্যে ডায়ালাইসিসি করানো হয়। নোয়াখালী আবদুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. আবদুস সালাম বলেন, ‘নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে স্বল্পমূল্যে চিকিৎসার উদ্যোগ প্রশংসার দাবি রাখে।’ নোয়াখালীতে কিডনি চিকিৎসার স্বপ্নদ্রষ্টা ডা. ফজলে এলাহী খান বলেন, ‘গরিব মানুষের কাছে ডায়ালাইসিস সেবা সহজলভ্য করার জন্য আমি এই কেন্দ্র স্থাপন করার উদ্যোগ নিই। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসহ সবাই সহায়তা করেছে। এখানে রোগীকে ডায়ালাইসিসের জন্য নিবন্ধন করার আগে তাঁর আর্থিক অবস্থার মূল্যায়ন করা হয়। হতদরিদ্র মানুষের কাছ থেকে কোনো অর্থ নেওয়া হয় না।’ সরেজমিন দেখা গেছে, হাসপাতালের কিডনি বিভাগে পর্যাপ্ত জনবল নেই। ডায়ালাইসিস ইউনিটের তথ্য অনুযায়ী, ইউনিটের শয্যা সংখ্যার মধ্যে নেগেটিভ বেড ১৩টি, হেপাটাইটিস বি ভাইরাস পজিটিভ বেড দুটি, সি ছয়টি এবং মোট ডায়ালাইসিস বেড ২১টি। অন্যদিকে, ভর্তি রোগীর বেড ১৬টি। মোট জনবল ৫৩ জন। এর মধ্যে পরামর্শক রয়েছেন একজন, মেডিকেল অফিসার তিনজন, সিনিয়র স্টাফ নার্স ১১ জন, ডায়ালাইসিস টেকনিশিয়ান ছয়জনসহ মোট ২১ জন দায়িত্ব পালন করলেও বাকি ৩২ জনই আউটসোর্সিংয়ে কাজ করছেন। এ বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, ‘নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে কিডনি চিকিৎসার উদ্যোগ প্রশংসার দাবি রাখে। কোনো সমস্যা-সংকট থাকলে তা দ্রুত দূর করব। ঢাকায় রোগীদের চাপ কমাতে জেলা পর্যায়ের সরকারি হাসপাতালে একই রকম সেবা চালুর বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হবে।’