ফেনীতে এবার সড়ক ও জনপদ বিভাগের একটি টেন্ডারে অংশ নিতে আসা নোয়াখালীর আক্কাস আলী নামের এক ব্যক্তিকে মারধর করে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে যুবলীগ নেতা সেন্টুর বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত সেন্টু সোনাগাজী উপজেলা যুবলীগের সদস্য এবং সোনাগাজী উপজেলা যুবলীগের সভাপতি আজিজুল হক হিরনের ঘনিষ্ঠজন বলে পরিচিত। সোমবার (২৯ এপ্রিল) দুপুরের দিকে ফেনীর সড়ক ও জনপদ ভবনের গ্যারেজ থেকে তাকে তুলে নিয়ে মারধর করে ছিনতাইয়ের ঘটনায় ফেনী মডেল থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এ ঘটনাটি ফেনী মডেল থানা ও সড়ক বিভাগের পক্ষ থেকে পৃথক ভাবে তদন্ত করা হচ্ছে। তবে অপ্রীতিকর এ ঘটনায় পর টেন্ডারটি বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সড়ক বিভাগ। এর আগে ২০২২ সালে অনলাইনে টেন্ডার পেয়ে ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কাজ করতে এসে হামলার শিকার হন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রবিউল হোসেন রুবেল। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে ঠাকুরগাঁওয়ের ঠিকাদার খলিলুর রহমান ফেনী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে টেন্ডার জমা দিতে এসে অপহরণ ও মারধরের শিকার হন। এছাড়াও সোনাগাজীর একটি রাস্তার কাজ করতে এসে বারবার হামলা শিকার হয়েছে ফেনীর বাহিরে থেকে আসা একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লোকজন। সড়ক বিভাগ ও ভুক্তভোগীর অভিযোগ পত্র সূত্রে জানা যায়, সোনাগাজী-নোয়াখালী সংযোগ সড়কের সাহেবের ঘাট ব্রিজের টোল আদায়ে ইজারাদার নিয়োগে টেন্ডার আহ্বান করে ফেনীর সড়ক জনপদ ও সেতু বিভাগ। টেন্ডার জমাদানের সপ্তম ধাপের শেষ দিনে টেন্ডার জমা দিতে আসেন নোয়াখালীর আমান ফারহান ট্রেডার্সের নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি আলী আক্কাস। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তিনি সড়ক ভবনে টেন্ডার বক্সে টেন্ডার জমা দিতে ওঠার সময় পেছন থেকে কয়েকজন যুবক তাকে ডাকেন তিনি এখন সময় নেই বলে ভবনের দ্বিতীয় তলায় চলে যাওয়ার চেষ্টার করলে ওই যুবকদের ২জন এগিয়ে এসে তাকে মারধর শুরু করে। এক পর্যায়ে যুবলীগ নেতা সেন্টু ও টিপুসহ আরও কয়েকজন যুবক একত্রিত হয়ে তাকে সড়ক ভবনের গ্যারেজ থেকে তুলে অন্যত্র নিয়ে মারধর করতে থাকে। এ সময় হামলাকারীরা আক্কাসের সাথে থাকা মোবাইল, মানিব্যাগ ও টেন্ডার সংক্রান্ত যাবতীয় ডকুমেন্টস ছিনিয়ে নেয়। এ ঘটনায় আক্কাস বাদী হয়ে ফেনী মডেল থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। এদিকে টেন্ডার খোলার পর বক্সে দেখা যায় সেতুটি ইজারা নিতে শুধুমাত্র অভিযুক্ত সেন্টুর মালিকানাধিন ‘সেন্টু এন্টারপ্রাইজ’ ছাড়া অন্য কারো আবেদন পড়েনি। এ বিষয়ে অভিযুক্ত যুবলীগ নেতা সেন্টু মিয়া বলেন, আমি অসুস্থ। আজকে আমি ঘর থেকেই বের হইনি। কেউ হয়তো আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। ফেনী মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, সড়ক ভবনের একটি ঘটনার বিষয়ে ভুক্তভোগী অভিযোগ করেছেন। বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সাথে তদন্ত করছি। এ বিষয়ে ফেনীর সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী বিনয় কুমার পাল বলেন, নোয়াখালীর একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে টেন্ডার জমা দিতে এসে এক ব্যক্তি বাধার সম্মুখীন হওয়ার বিষয়ে অভিযোগ পাওয়ার পর আমরা টেন্ডারটি বাতিল করেছি। ঘটনাটি নিয়ে আমাদের ডিপার্টমেন্টাল তদন্ত হচ্ছে। ফেনীর বিভিন্ন উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট দফতর সূত্রে জানা যায়, ফেনী জেলার যে কোনো উন্নয়ন কাজের টেন্ডারের মাধ্যমে অনলাইনে অথবা অফলাইনে অন্য জেলার ঠিকাদাররা কাজ নিতে পারবে না, এমন একটি ধারা চলমান রয়েছে। ওই ধারা ভঙ্গ করায় ২০২২ সালের ১১ মে দাগনভূঞা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একটি কাজ করতে এসে হামলার শিকার হয়ে কাজ রেখে চলে যান ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রবিউল হোসেন রুবেল। এর আগে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে ফেনীতে গ্রাম পুলিশের পোশাক সরবরাহের উন্মুক্ত দরপত্রে অংশ নেওয়ার জন্য ‘মাটি আর মানুষ’ নামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষে দরপত্র দাখিল করতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আসেন টাঙ্গাইলের ঠিকাদার খলিলুর রহমান। সেখান থেকে তাকে অপহরণ করে মারধর করে কাগজপত্র ছিনিয়ে নেওয়া হয়। এসব ঘটনায় ফেনীর দাগনভূঞা থানায় এবং ফেনী মডেল থানায় মামলা দায়ের করা হয়। এছাড়াও সোনাগাজীর একটি রাস্তার কাজ করতে এসে বারবার হামলা শিকার হয়েছে ফেনীর বাইরে থেকে আসা একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লোকজন।
১ মে ২০২৪