নোয়াখালী জেলার মাইজদী যেন দুর্নীতির সর্বোচ্চ আখড়া। হাজার হাজার কোটি টাকা এখানে স্থানীয় আমলা, প্রশাসন ও রাজনীতীবিদ সবাই একে অপরের সোথে মিলে মিশে লুটপাট করছে। এই সমস্ত লুটপাটের মাষ্টার মাইন্ডরা হল নোয়াখালী-৪ (সদর ও সুবর্ণচর) আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ একরামুল করিম চৌধুরী, সদর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান এ কে এম সামছুদ্দিন জেহান, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল ওয়াদুদ পিন্টু, নোয়াখালী পৌরসভার মেয়র জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শহিদ উল্যাহ খান সোহেল, জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি শিহাব উদ্দিন শাহীন।
রাস্তা নির্মাণ, কালভাট, ও বিভিন্ন বড় বড় ভবন নির্মাণের জন্য বরাদ্ধ কৃত টাকা ভাগাভাগি করে লুটপাট করে নিয়ে যায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখাযায় যে যথেষ্ট পরিমানের নিম্ন মানের কাজ করা হয়েছে। আবার অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় কোন ধরনের কাজ না করেই বিল পাস করে সেই কাজের টাকা লুটপাট করা হয়েছে। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি লুটপাট হয়েছে ভবন নির্মাণ, রাস্তা নির্মাণ, খাল সংস্কার ও খাল খনন প্রকল্পে। ৩ হাজার ৭১৭ দশমিক ৫০ বর্গমিটার অফিস ভবন নির্মাণ বাবদ ৪ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছিল। মাত্র ২০৫ বর্গমিটারের ঘর নির্মাণ করেই ব্যয় দেখানো হয়েছে চার কোটি টাকা। যার নির্মাণ ব্যয় সর্বোচ্চ ২২ লাখ টাকা বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট বিভাগ। প্রকল্পের আওতায় ২ হাজার ১৮ মিটার রাস্তা নির্মাণ বাবদ ৫ কোটি ২ লাখ টাকা খরচ ধরা হয়। অথচ ১ হাজার ১২ মিটার রাস্তা নির্মাণ করেই সব টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। আবার শুধু তিন অর্থ বছরের মোট ১৫ কোটি ৫৪ লাখ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা না দিয়ে প্রকল্পের হিসেবে জমা দেওয়া হয়, যা আর্থিক শৃঙ্খলা পরিপন্থি। প্রকল্পটির কাজ শতভাগ সমাপ্ত ঘোষণা করার পরও কিছু অর্থ সংস্থানের জন্য আবার মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করা হয়েছে। প্ল্যান্ট তৈরির কথা ছিল সেটার কাজ কিছুই হয়নি। এ খাতে বরাদ্দ অর্থ অন্য খাতে ব্যায় দেখানো হয়েছে। তবে বিষয়টি সম্পর্কে স্পষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি।
আইএমইডি জানায়, পরিদর্শনকালে অফিস ভবন পাওয়া গেছে মাত্র ২০৫ বর্গমিটার। ২ হাজার ১৮ বর্গমিটারের পরিবর্তে ১ হাজার ১২ মিটার রাস্তা পাওয়া যায়। এ খাতের প্রকৃত ব্যয় হওয়ার কথা ২ কোটি ৫১ লাখ টাকা। অথচ ব্যয় দেখানো হয়েছে ৫ কোটি টাকার ওপরে। ২ হাজার ৫ বর্গমিটার আরসিসি ড্রেন নির্মাণ বাবদ ব্যয় দেখানো হয়েছে ৫ কোটি ২২ লাখ টাকা। আরসিসি ড্রেন মাত্র দেড় হাজার বর্গমিটার পাওয়া গেছে। সেই হিসাবে ব্যয় হওয়ার কথা ২ কোটি ১১ লাখ টাকা। অথচ ড্রেন নির্মাণ বাবদ খরচ দেখানো হয়েছে ৩ কোটি টাকা। এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে নোয়াখালীর জেলার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাকির হোসেন প্রাত্যহিক ডট কম এর সাংবাদিককে বলেন, ‘আমি আসার আগেই এ প্রকল্পটির কাজ হয়েছে। আমি দায়িত্ব নিয়েছি খুব বেশি দিন হয়নি। আমার মনে হয় প্রকল্পের এক খাতের টাকা অন্য খাতে গেছে।
প্রাত্যহিক ডট কম অনুসন্ধানে দেখা যায় যে এই সমস্ত লুটতরাজের পিছনে স্থানিয় প্রশাসন থেকে শুরু করে এমপি, উপজেলা কর্মকর্তা, উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌরসভা চেয়ারম্যন ও বিভিন্ন পদবী ধারী আমলারা জড়িত। অত্যন্ত প্রভাভশালী হওয়ায় এই সব বিষয় নিয়ে কেউ কথা বলতে সাহস পায় না। এছাড়াও প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার উর্ধতন কর্মকর্তারাও এর সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে জড়িত।