ধর্মশালার আউটফিল্ড এখনো ঠিকমত প্রস্তুত নয় তা বাংলাদেশ যখন বোলিং করতে আসে তখনই বুঝা যাচ্ছিলো।পেসররা রান আপ নেয়ার সময় আউটফিল্ডের বালি উপরের দিকে উঠে আসছিলো।যার কারণে স্বাচ্ছন্দ্য পাচ্ছিলোনা বোলররা।কমেন্ট্রি থেকে তো বলেই উঠেছে এই আউটফিল্ডে সাকিব কি তাঁর ফিল্ডারদের ডাইভ দিতে বলবে কিনা! বড় টুরনামেন্ট,যেখানে একটি ইনজুরি ভেস্তে দিতে পারে দলের সকল পরিকল্পনা।মাঠ থেকে যেন মাটি উপরের দিকে উঠে আসছিল।
এর আগে বিশ্বকাপে টাইগারদের প্রথম ম্যাচে টসে জিতে বোলিং নেয় কাপ্তান সাকিব।আফগানরা তাঁদের ইনিংস দেখেশুনেই শুরু করেন।দুই ব্যাটার গুরবাজ এবং ইব্রাহিম ওপেনিং পার্টনারশিপে তুলেন ৪৭।টাইগারদের হয়ে প্রথম থাবা দেয় কাপ্তান সাকিব।সাকিবের বল সুইপ করতে গিয়ে লেগে তালুবন্দি হন ইব্রাহিম।এরপরেই বলার মত আর কিছু করতে পারেনি আফগান ব্যাটাররা।
২০১৯ বিশ্বকাপে সাউদাম্পটন আফগানদের বিপক্ষে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন সাকিব। আজ তিনি ৫ উইকেট নেননি, ৩ উইকেটে নিয়েই থেমেছেন। সাকিবের দেখানো পথে আরেক স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজও নিয়েছেন ৩ উইকেট। তাতেই ঘুরে গেছে ম্যাচের মোড়। শেষ পর্যন্ত ৩৭.২ ওভারে ১৫৬ রানে থেমেছে আফগানদের ইনিংস।
৪৭ রান করে থিতু গুরবাজকে আউট করার পর তানজিদকে নিয়ে উল্লাসে মাতে পুরো বাংলাদেশ দল। আফগানদের রান তখন ১১২ রানে ৪ উইকেট। খুব দ্রুতই তা ১২৬ রানে ৬ উইকেটে পরিণত হয়। ২৯তম ওভারে সাকিব তাঁর দ্বিতীয় স্পেলে ফিরেই আউট করেন বাঁহাতি নাজিবুল্লাহ জাদরানকে (১৩ বলে ৫ রান)। তাসকিন দীর্ঘ হতে দেননি আরেক নতুন ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ নবীকে (১২ বলে ৬ রান)। এ নিয়ে চতুর্থবার নবীকে আউট করলেন তাসকিন।
আফগানদের টপ অর্ডার হচ্ছে মূল শক্তির জায়গা।আর সেখানেই আঘাত করা ছিল মূল লক্ষ্য।একে একে তাসের ঘরের মত ভেঙে পরে আফগানদের ইনিংস।সাকিবের সাথে স্পিনে পার্টনার হিসেবে যোগ দেন মেহেদি মিরাজ।
বাংলাদেশের হয়ে সাকিব,মিরাজ জুটি নেয় ৩ টি করে উইকেট।অপরদিকে পেসারদের মাঝে শরিফুল ২ এবং তাসকিন-ফিজ নেন ১ টি করে উইকেট।
বাংলাদেশের সামনে ৫০ ওভারে ১৫৭ রানের টার্গেট দেয় আফগানরা।জবাবে ব্যাট করতে নেমে আফগানদের মত শুভ সূচনা করতে পারেনি বাংলাদেশি ওপেনাররা। ৫ রান করে রান আউট হয়ে ফিরেন তানজিদ।একই পথে ফারুকির বল ইনসাইড এজ হয়ে বোল্ড হয়ে ফিরেন লিটন।ওপেনিং যে দলের সবচেয়ে দুর্বল জায়গা তা যেন আবারো প্রমাণ হলো। এরপরে মিরাজ এবং শান্ত জুটি বাধেন।দেখেশুনে খেলতে থাকে আফগান বোলারদের।যদিও বেশকিছু ক্যাচ ছেড়েছে আফগানরা। ২০১৯ বিশ্বকাপের পর টপ ১০ দলের মাঝে আফগানদের ক্যাচিং রেশিও সবার নিচেই।বোলিং চেঞ্জ করেও মেহেদি-শান্তর জুটি ভাঙতে পারছিলেন না আফগান অধিনায়ক হাসমাতুল্লাহ।অনেক দেখেশুনেই আফগান স্পিনারদের মোকাবেলা করতে থাকেন দুই ইন ফর্ম ব্যাটার শান্ত এবং মিরাজ।যাদের উপরে পুরো বিশ্বকাপেই নজর থাকবে সবার।৫৮ বলে হাফ সেঞ্চুরির দেখা পান মিরাজ।মিরাজই যেন বাস্তব টিম ম্যানের উদাহরণ,দলের প্রয়োজনে খেলেছেন সব সম্ভব্য পজিশনেই।একজন প্লেয়ারের হয়তো এমনই হওয়া উচিৎ।মিরাজ ৫০ রানে থাকাকালীন মুজিবের বলে লেগ বিফর দিলেও মিরাজ রিভিউ নিলে দেখা যায় বল প্যাডে যাওয়ার আগেই ব্যাটে লাগে।যার ফলে আম্পায়ার তাঁর ডিসিশন চেঞ্জ করতে বাধ্য হন।অবশেষে ৫৭(৭৩) করে নাভিন উল হকের বলে আউট হয়ে সাঝঘরে ফিরেন মিরাজ।অসাধারন এক ক্যাচ নেয় আফগানদের সিনিয়র ক্রিকেটার রহমত শাহ।এরপরে ব্যাট করতে নামেন দলের কাপ্তান সাকিব।তিনিও শুরু করেন দেখেশুনে। তখন কাজ ছিল একটাই,দ্রুত খেলা শেষ করে রান রেইটের দিকে এগিয়ে থাকা কারণ এই ধরনের রাউন্ড রবিন সিস্টেমের টুর্নামেন্টে রান রেইট অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।কিন্তু ১৪ রান করে উমারযাইয়ের বলে পুল খেলতে গিয়ে ফারুকির হাতে তালুবন্ধি হয়ে আউট হন সাকিব।
তখন দলের আর লাগতো ১১ রান।ব্যাটিং করতে নামেন আরেক অভিজ্ঞ ক্রিকেটার মুশফিক।সেই ওভারেই নিজের ৬ষ্ঠ ফিফটির দেখা পান নাজমুল শান্ত।এই বছরটা দুর্দান্ত যাচ্ছে শান্তর।তার উপরেই দাঁড়িয়ে আছে দলের টপ অর্ডার।
২বলে দুই চারে ম্যাচ নিজেদের করে নেয় শান্ত।৬ উইকেটের এক সহজ জয় অবশ্যই সাহস যোগাবে দলের সবার। ১৫ ওভার ২ বল হাতে রেখেই জয় নিশ্চিত করে টাইগাররা কিন্তু এই ম্যাচ থেকে শেখারও আছে অনেক।পরের ম্যাচে ১০ তারিখ এই মাঠেই ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। ম্যান অফ দ্যা ম্যাচ হন মিরাজ।
আমাদের নজরে-
ম্যান অফ দ্যা ম্যাচ-মিরাজ
ফ্লপ অফ দ্যা ম্যাচ-লিটন দাস