আগামীকাল বিশ্বকাপের ৩য় ম্যাচে উড়ন্ত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে চেন্নাইয়ে মাঠে নামবে বাংলাদেশ। গত ম্যাচের অসহায় আত্মসমর্পণের পর এই ম্যাচে কামব্যাক করার চেস্টায় থাকবে টাইগাররা।দলে আসতে পারে পরিবর্তন।দুই ম্যাচেই পেসরার তেমন সুবিধা করতে পারেনি যদিও বিশেষজ্ঞদের মতে এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সবচেয়ে শক্তির জায়গা ছিল পেস বোলিং ডিপার্টমেন্ট।
নিউজিল্যান্ড ম্যাচের আগের সংবাদ সম্মেলনে এসে নাজমুল হোসেন শান্ত আজ জানালেন, ‘কোনো পেস বোলারই হতাশ নয়। সবাই ঠিক আছে। উইকেটটাই এমন, স্বাভাবিকভাবে রান একটু বেশিই দেবে।’
নাজমুল এরপর যোগ করেন, ‘আমরা সাধারণত দেখি না যে আমাদের পেসাররা ১০ ওভারে ৬০, ৬৫ বা ৭০ রান দিচ্ছে। সবাই জানে যে এখানে উইকেটটা ভালো। এখানে যত কম রানের মধ্যে (প্রতিপক্ষকে) রাখতে পারি, শুরুতে কীভাবে উইকেটটা বের করতে পারি, মাঝের ওভারে কীভাবে উইকেট নিতে পারি—সবার একটা পরিকল্পনা আছে। সেভাবে কাজ করছে।’নাজমুল বলেছেন, ‘ভারত-অস্ট্রেলিয়ার ম্যাচে দেখেছি উইকেট স্পিনারদের যথেষ্ট সাহায্য করছে। যদি উইকেট এমন থাকে, তাহলে সেটা আমাদের স্পিনারদেরও সাহায্য করবে। তবে আমরা উইকেট নিয়ে ভাবছি না। নিজেদের পরিকল্পনাটা বাস্তবায়ন করতে হবে। করণীয় কী, সেটা নিয়ে পরিষ্কার ধারণা রাখতে হবে।’
বিশ্বকাপে সব দলই টপ অর্ডার থেকে বড় ইনিংস পাচ্ছে। সেদিকে তাকিয়েই নাজমুল বলেন, ‘আমরা কতটুকু সাহস ও স্বাধীনতা নিয়ে ব্যাটিং করছি, সেটা গুরুত্বপূর্ণ। অন্য দলের ব্যাটসম্যানরা যেভাবে রান করছে, আমার মনে হয়, সবাই খুব আরামেই রান করছে। মন খুলে ও স্বাধীনতা নিয়ে ব্যাটিং করাটা জরুরি। সবাই স্বাধীনতা নিয়ে ব্যাটিং করলে ভালো করা সম্ভব। কারণ, কোচিং স্টাফ ও অধিনায়ক—সবার কাছ থেকে সে স্বাধীনতা আমরা পেয়েছি।’
চেন্নাইয়ের উইকেটে ভারত এবং অস্ট্রেলিয়ার খেলাতে দেখা গিয়েছে পিচ কিছুটা স্পিন ফ্রেন্ডলি।ম্যাচে কুলদিব যাদবকে খেলতে অজিদের যে কতটা সমস্যা হয়েছিলো তা অবশ্য যাদবের বোলিং স্ট্যাটস দেখলেই পরিষ্কার হয়।তবে পিচ নিয়ে একদম নিশ্চিতভাবে কিছু না বলে দল মনোযোগ দিবে খেলায় তাই আশা সকলের।কাল হয়তো মুস্তাফিজের বদলে দলে আসতে পারেন বাঁ হাতি স্পিনার নাসুম আহমেদ।এই একটা পরিবর্তন ছাড়া কোনো পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা নেই।দলের শক্তিমত্তার জায়গা মাথায় রেখে সবচেয়ে বেশি কাজ যে ব্যাটারদের করা দরকার তা দিনের আলোর মত পরিষ্কার।দলের টপ অর্ডার তাসের ঘরের মত ভেঙে পরাতেই ইংলিশদের বিপক্ষে হারের অন্যতম কারণ।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সর্বশেষ ম্যাচে রানে ফিরেছেন লিটন দাস। সহজাত ব্যাটিং করে ৬৬ বলে ৭৬ রানের ইনিংস খেলেন এই ওপেনার। তবে তাঁর ওপেনিং সঙ্গী তানজিদ হাসানের রান–খরা কাটছে না। এশিয়া কাপে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হওয়া তানজিদ এর মধ্যে ৭টি ম্যাচ খেলেও সর্বোচ্চ করেছেন ১৬ রান। অবশ্য বিশ্বকাপের প্রস্তুতি ম্যাচে শ্রীলঙ্কা ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ফিফটি করেছেন এই বাঁহাতি। কিন্তু প্রস্তুতি ম্যাচের ছন্দটা টেনে আনতে পারছেন না বিশ্বকাপে।
পারিপার্শ্বিক সব দিক বিবেচনায় এই বিশ্বকাপে ৩০০+ স্কোরই হবে নরমাল স্কোর।কিন্তু আমাদের ব্যাটারদের ৩০০+ স্কোর করার অভ্যাস যে খুব একটা নেই তা সবারই জানা।বিশেষত যখন আপনি দেশে ২৪০-২৬০ রানের উইকেটে খেলে অভ্যস্ত হবেন তখন বিশ্বমঞ্চে ৩০০+ রান করা একটি কষ্টসাধ্য ব্যাপারে পরিণত হবে।এখানে ব্যাটসম্যানদের যেমন টেকনিকাল ত্রুটি আছে ঠিক তেমনই ত্রুটি আছে ক্রিকেট বোর্ডের পিচ ম্যানেজমেন্টে।আমাদের ঘরোয়া লীগের মান কতটা বাজে তা ঘরোয়া লীগ এক সিজন দেখলেই পরিষ্কার হবে।
নিউজিল্যান্ড দল আছে উড়ন্ত ফর্মে।দলে কাল ফিরতে পারেন অভিজ্ঞ কাপ্তান কেন উইলিয়ামসন।সেক্ষেত্রে ফিলিপস বাঁ চ্যাপম্যানকে বসতে হবে সাইডবেঞ্চে।নিউজিল্যান্ড দলের দুই ব্যাটসম্যান কনওয়ে এবং রাচিন রবিন্দ্র আছেন দুর্দান্ত ফর্মে। তাঁদের বোলিং লাইনে আছে হেনরি,সাউদি,বোল্ট,ফার্গুসনদের মত বিশ্বমানের পেসার এছাড়াও স্পিনে আছেন অভিজ্ঞ লেগি সোদি,বা হাতি স্পিনার স্যান্টনার।রচিনও বল করতে পারেন বেশ ভালো।সব মিলিয়ে এই নিউজিল্যান্ড দল এই বিশ্বকাপের সবচেয়ে ব্যালেন্সড দলের একটা।সম্প্রতি নিউজিল্যান্ডের সাথে ২-০ তে হোম সিরিজ হেরেছে বাংলাদেশ।দুই দলই গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়দের বিশ্রাম দিয়ে সিরিজটি খেলেছিলো যেখানে ঘরের মাটিতে হার বরন করে বাংলাদেশ।
দুই দলের স্পিনারদের এই ছন্দের সঙ্গে বাংলাদেশ–নিউজিল্যান্ড ম্যাচে মিলে যাচ্ছে কন্ডিশনের আনুকূল্যও। বাংলাদেশের স্পিনাররা নিউজিল্যান্ডের জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারেন কি না—এ প্রশ্নে তাই দুই দলের সম্ভাবনার কথাই বলেছেন কিউই অধিনায়ক উইলিয়ামসন, ‘আমরা জানি আগামীকাল বড় চ্যালেঞ্জ আছে। আর এই টুর্নামেন্টে প্রতিটি দলই চ্যালেঞ্জিং, যেকোনো দল অন্যদের হারিয়ে দিতে পারে। আর এটাই আসলে টুর্নামেন্টকে রোমাঞ্চকর করে তোলে। আর কন্ডিশন তো সব সময়ই বদলায়। এখানে দেখলাম স্পিন করে। খেলা চলতে চলতে পিচের আচরণও বদলাতে থাকে। আমি মনে করি, দুই দলেরই ভালো স্পিনার আছে। কোনো সন্দেহ নেই যে স্পিন বড় ভূমিকা রাখবে।’
এবারের বিশ্বকাপে পিচের মান কেমন দেখছেন, এমন প্রশ্নেও ইতিবাচক মত নিউজিল্যান্ড অধিনায়কের, ‘আমরা যে দুটি পিচে খেলেছি, দুটিই ভালো ছিল। একটা ছিল নতুন (আহমেদাবাদে), আরেকটা ছিল এক ম্যাচ ব্যবহার হওয়া (হায়দরাবাদে)। আমার মনে হয়, বিশ্বকাপজুড়ে ভারতে ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের উইকেট দেখতে পাব আমরা। বৈশ্বিক ইভেন্টে এটাই স্বাভাবিক।’
সম্ভব্য একাদশঃ-
বাংলাদেশ -সাকিব আল হাসান (অধিনায়ক), তানজিদ হাসান, লিটন দাস, নাজমুল হোসেন শান্ত, তৌহিদ হৃদয়, মুশফিকুর রহিম( উইকেটরক্ষক), মেহেদী হাসান মিরাজ, শেখ মেহেদি, তাসকিন আহমেদ, শরিফুল ইসলাম, মুস্তাফিজুর রহমান/ নাসুম আহমেদ।
নিউজিল্যান্ডের সাথে বাংলাদেশিদের মাঝে সবচেয়ে বেশি রান পেয়ছে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ(৭৪৬) এবং সবচেয়ে বেশি উইকেট নিয়েছেন সাকিব আল হাসান(৩৭ টি)।কিউইদের হয়ে সবচেয়ে বেশি রান রস টেইলরের(১০১০) এবং সবচেয়ে বেশি উইকেটের মালিক মিলস(৩৩) যাদের কেউই বর্তমান দলে আর খেলেন না।
নিউজিল্যান্ড- কেন উইলিয়ামসন (অধিনায়ক), ডেভন কনওয়ে, উইল ইয়ং, রাচিন রবীন্দ্র, টম ল্যাথাম, ড্যারিল মিচেল, গ্লেন ফিলিপস, মিচেল স্যান্টনার, মার্ক হেনরি, লকি ফার্গুসন/ইশ সোধি, ট্রেন্ট বোল্ট।
ম্যাচ শুরু বাংলাদেশ সময় দুপুর ২.৩০ মিনিট।