ভূতুড়ে পরিবেশ যেনো চেনার উপায় নেই এটি জেলা প্রাণিসম্পদ হাসপাতাল। জেলার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থান হলেও শহরের অধিকাংশ বাসিন্দাই চেনেন না হাসপাতালটিকে। তীব্র জনবল সংকটে ধুঁকছে নোয়াখালী জেলার প্রাণিসম্পদ বিভাগ। ৯ উপজেলায় ৬টিতেই নেই পশু চিকিৎসক। জনবল সংকট দীর্ঘ দিনের। হাসপাতাল গুলোতে গরু, ছাগল, ভেড়া, মহিষসহ অন্য প্রাণির চিকিৎসা নিতে আসা স্থানীয়রা ভোগান্তির শিকার হন।
জানা যায়, নোয়াখালীর প্রাণিসম্পদ দপ্তরে পশুচিকিৎসক সংকটের কারণে কাঙ্ক্ষিত সেবা পেতে বিড়ম্বনায় পড়ছেন প্রান্তিক পর্যায়ের খামারি ও পশু পালনকারীরা। জেলায় প্রাণিসম্পদ বিভাগের জনবলকাঠামোয় অনুমোদিত পদ ৯৩টি। এখন জনবল আছে ৫৭ জন। প্রায় ৩৬টি পদ শূন্য। শূন্য পদে পদায়ন না হওয়ায় প্রাণিসম্পদ সংশ্লিষ্ট অন্য যারা আছেন তাদের সহযোগিতায় সেবা কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
সরেজমিনে জেলা প্রাণি হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, নেই কোনো সাইনবোর্ড নেই কোনো জনবল। পরিত্যক্ত ল্যাব রুম। চিকিৎসক না থাকায় হাসপাতালে আসা অসুস্থ পশুর চিকিৎসা দিচ্ছেন এনিমেল এটেন্ডেন্ট মো. মহিন উদ্দিন। অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা ডেপুটি ডাইরেক্টর (কৃত্রিম প্রজনন) ডা. মো. আব্দুর রহিম অফিস করছেন অনিয়মিত। জনবল সংকটে একই অবস্থা উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরেও।
জেলা প্রাণি হাসপাতালের এনিমেল এটেন্ডেন্ট মো. মহিন উদ্দিন বলেন, জনবল না থাকায় আমি বাড়তি দায়িত্ব পালন করছি। ভেটেরিনারি সার্জন থাকলে আমাকে পশুর চিকিৎসা করতে হতো না। আমাদের এখানে স্টাফ অফিসার ৬ জন থাকার কথা। ভেটেরিনারি সার্জন নাই। ভেটেরিনারি কম্পাউন্ডার নাই। গাড়ি আছে কিন্তু চালক নাই। আমাদের ডেপুটি ডাইরেক্টর (কৃত্রিম প্রজনন) ডা. মো. আব্দুর রহিম স্যার এখন দেখেন। আমি স্যারের পরামর্শে আমি দেখি। শূন্য পদে জনবল নিয়োগ করা গেলে সেবার মান বৃদ্ধির পাশাপাশি কাজের পরিধিও বাড়বে।
জেলা প্রাণি হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রিকশা চালক আব্দুল গফুর বলেন, জেলা হাসপাতালের ভূতুড়ে পরিবেশ। আমরা শহরে রিকশা চালাই তাই হাসপাতাল টা চিনি তবে বেশিরভাগ মানুষ এই হাসপাতাল টাকে চিনেনা। ঠিকমতো ওষুধ ও পাইনা। স্লিপ লিখে দিলে সেটা নিয়ে দোকানে যাই। এই হাসপাতাল দেখার কেউ নাই।
নাগরিক অধিকার আন্দোলন নোয়াখালীর সদস্য সচিব জামাল হোসেন বিষাদ বলেন,সরকারি সেবা আসলে খুবই নগন্য। তারপরও তারা সেসব ভ্যাকসিন গ্রামের কোয়াক ডাক্তারের কাছে বিক্রি করে দেয়। সম্পদশালী বা বড় খামারি ছাড়া সরকারি সেবা কেউ পায় না। যারা টিকে আছে তারা কেবল নিজের প্রচেষ্টায় টিকে আছে। প্রায় সাড়ে ১১ লাখ টাকা ব্যয়ে হরিয়ানা, যমুনাপাড়িসহ বিভিন্ন জাতের ২৬ টি ছাগল নিয়ে আমার খামার ছিল। আমার সব নিঃশেষ হয়ে গেছে। আমি অনেকবার সরকারি সেবার জন্য প্রাণিসম্পদ দপ্তরে যোগাযোগ করেছি তাদের থেকে ভ্যাকসিন আমি পাই নাই। পরবর্তীতে বেসরকারি সেবা নিয়েও আমার খামারটি টেকাতে পারি নাই।
সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. গৌতম চন্দ্র দাস বলেন, তীব্র জনবল সংকটে আমাদের অবস্থা বেহাল। আমরা মানুষের কাঙ্ক্ষিত সেবা দিতে পারি না। দিন দিন মানুষের মাঝে পশুপালনে আগ্রহ বাড়লে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ আমাদের নাই। জেলায় কোনো ল্যাব না থাকায় আমরা রোগ নির্ণয় করতে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। পুরো জেলার সেম্পল ফেনীতে পাঠাতে হয়। সেটার জন্য লম্বা সময় অপেক্ষা করতে হয়। তবে কিছু কোম্পানি ও কোয়াক ডাক্তাররা চিকিৎসা না বুঝে এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করছেন। ফলে এন্টিবায়োটিক রেজিস্টেন্স তৈরি হচ্ছে৷ এটি আমাদের জন্য মারাত্মক হুমকি।
জেলা প্রাণি হাসপাতালের দায়িত্বে থাকা ডেপুটি ডাইরেক্টর (কৃত্রিম প্রজনন) ডা. মো. আব্দুর রহিম বলেন, আমি অতিরিক্ত দায়িত্বে জেলা প্রাণি হাসপাতালে আছি। আমাদের জনবল সংকট আছে। দীর্ঘদিন ধরে আমাদের ল্যাব নেই। প্রকল্পের মাধ্যমে ল্যাব স্থাপন করা হয়েছিল। প্রকল্প শেষ হওয়ায় ল্যাবও বন্ধ হয়ে গেছে। মালামাল সব নষ্ট হয়ে গেছে। যদি আবার ল্যাব চালু হতো তাহলে আমাদের উপকার হতো।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, জেলায় প্রাণিসম্পদ বিভাগে অনুমোদিত ৯৩টি পদের মধ্যে এখন জনবল আছে ৫৭ টি। প্রায় ৩৬টি পদ শূন্য। ৯ উপজেলায় ৯ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও আছে মাত্র তিন জন। তারাও সামনে প্রশিক্ষণে যাবে তখন আমাদের আরও খারাপ অবস্থায় পড়তে হবে। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তপক্ষের কাছে বারবার জানাচ্ছি কিন্তু সাড়া পাচ্ছিনা। আগামী বিসিএস এ আশাকরি নিয়োগ হলে আমাদের জনবল ঘাটতি কমবে। বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে আরও বেশি জনবল পেলে প্রাণিসম্পদ আরও সমৃদ্ধ হবে। শত সমস্যার মধ্যেও আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত আছে। আমরা দিন দিন ভালো করছি।